< যিরমিয়ের বই 32 >

1 যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের দশম বছরে, নবূখদনিৎসরের রাজত্বের আঠারো বছরে সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে এল।
নেবুখাদনেজারের রাজত্বের আঠারোতম বছরে, যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের রাজত্বের দশম বছরে, যিরমিয়ের কাছে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হল।
2 সেই দিনের বাবিলের রাজার সৈন্যদল যিরূশালেম অবরোধ করছিল এবং যিরমিয় ভাববাদী যিহূদার রাজবাড়ীর পাহারাদারদের উঠানে বন্দী ছিলেন।
ব্যাবিলনের রাজার সৈন্যেরা তখন জেরুশালেম অবরোধ করেছিল। আর ভাববাদী যিরমিয় যিহূদার রাজপ্রাসাদে রক্ষীদের প্রাঙ্গণে বন্দি ছিলেন।
3 যিহূদার রাজা সিদিকিয় তাঁকে বন্দী করেছেন এবং বলেছেন, “কেন তুমি ভাববাণী করে বল, সদাপ্রভু বলেন, ‘আমি এই শহরকে বাবিলের রাজার হাতে সমর্পণ করব এবং সে এটা দখল করবে।
যিহূদার রাজা সিদিকিয় সেই সময় যিরমিয়কে এই কথা বলে বন্দি করেছিলেন, “আপনি যেসব কথা বলে ভাববাণী করেন, সেইরকম কেন করেছেন? আপনি বলেন, ‘সদাপ্রভু এই কথা বলেন, আমি এই নগর ব্যাবিলনের রাজার হাতে সমর্পণ করতে চলেছি, আর সে এই নগর দখল করবে।
4 যিহূদার রাজা সিদিকিয় কলদীয় রাজার হাত থেকে রেহাই পাবে না, কারণ সে বাবিল রাজার হাতে সমর্পিত হবে। বাবিলের রাজার মুখোমুখি হয়ে সে কথা বলবে এবং নিজের চোখে তাকে দেখবে।
যিহূদার রাজা সিদিকিয় ব্যাবিলনীয়দের হাত এড়াতে পারবে না, কিন্তু সে নিশ্চিতরূপে ব্যাবিলনের রাজার হাতে সমর্পিত হবে। সে ব্যাবিলনের রাজার মুখোমুখি হয়ে তাকে স্বচক্ষে দেখবে ও তার সঙ্গে কথা বলবে।
5 কারণ সিদিকিয় বাবিলে যাবে এবং যতক্ষণ না আমি তার সাথে কিছু করি, ততক্ষণ পর্যন্ত সে সেখানেই থাকবে।’ প্রস্তুত এটা সদাপ্রভুর ঘোষণা। কারণ তোমরা কলদীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করলেও সফল হবে না।”
সে সিদিকিয়কে ব্যাবিলনে নিয়ে যাবে। আমি তার তত্ত্বাবধান না করা পর্যন্ত সে সেখানেই থাকবে, একথা সদাপ্রভু বলেন। তুমি যদি ব্যাবিলনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, তাহলে তুমি সফল হবে না।’”
6 যিরমিয় বললেন, “সদাপ্রভু এই বাক্য আমার কাছে এসেছিল এবং বলল,
যিরমিয় বললেন, “সদাপ্রভুর বাক্য আমার কাছে উপস্থিত হয়েছে:
7 ‘দেখ, আমার কাকা শল্লুমের ছেলে হনমেল তোমার কাছে আসবে এবং বলবে অনাথোতে আমার যে জমিটি আছে, তা তুমি নিজের জন্য কেনো, কারণ সেটি কিনে মুক্ত করা অধিকার তোমার আছে’।
তোমার কাকা শল্লুমের পুত্র হনমেল তোমার কাছে এসে বলবে, ‘অনাথোতে আমার যে ক্ষেতটি আছে, তা তুমি ক্রয় করো, কারণ নিকটতম আত্মীয়রূপে তা ক্রয় করা তোমার ন্যায়সংগত অধিকার ও কর্তব্য।’
8 তখন সদাপ্রভুর কথামতই আমার কাকার ছেলে হনমেল পাহারাদারদের উঠানে আমার কাছে এসে বলল, ‘বিন্যামীন প্রদেশে অনাথোতে আমার যে জমি আছে সেটা তুমি কেনো। কারণ সেখানে বাস করার অধিকার ও সেটি মুক্ত করার অধিকার তোমার আছে। তাই তুমিই সেটি নিজের জন্য কেনো’। তখন আমি জানলাম এটি সদাপ্রভুরই বাক্য।
“তারপর, সদাপ্রভু যেমন বলেছিলেন, আমার কাকাতো ভাই হনমেল রক্ষীদের প্রাঙ্গণে আমার কাছে এসে বলল, ‘বিন্যামীনের এলাকায় স্থিত অনাথোতে আমার যে ক্ষেতটি আছে, তা তুমি ক্রয় করো। কারণ তা মুক্ত ও দখল করার জন্য তোমার ন্যায়সংগত অধিকার আছে, তাই তুমি নিজের জন্য তা ক্রয় করো।’ “আমি জানতাম যে, এ ছিল সদাপ্রভুর বাক্য;
9 তাই আমার কাকার ছেলে হনমেলের কাছ থেকে আমি অনাথোতের সেই জমিটি কিনলাম এবং সতেরো শেকল রূপা তাকে ওজন করে দিলাম।
তাই আমার কাকাতো ভাই হনমেলের কাছ থেকে আমি অনাথোতে ওই ক্ষেত্রটি ক্রয় করলাম এবং তাকে সতেরো শেকল রুপো ওজন করে দিলাম।
10 ১০ আমি গুটানো কাগজে লিখলাম, সীলমোহর করলাম ও সাক্ষী রাখলাম। তখন দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে রূপা দিলাম।
আমি সেই দলিল স্বাক্ষর করে সিলমোহর দিলাম, সাক্ষী রাখলাম এবং দাঁড়িপাল্লায় সেই রুপো ওজন করলাম।
11 ১১ আমি দুটি গুটানো কাগজ নিলাম নিয়ম ও শর্ত লেখা সীলমোহর করা একটি ও সীলমোহর না করা আর একটি।
আমি সেই ক্রয়ের দলিলটি নিলাম, সিলমোহরাঙ্কিত প্রতিলিপি, যার মধ্যে নিয়ম ও শর্ত লেখা ছিল এবং সিলমোহরাঙ্কিত না করা একটি প্রতিলিপিও নিলাম,
12 ১২ আমি আমার কাকার ছেলে হনমেলের সামনে, যে সাক্ষীরা সীলমোহর করা কাগজে লিখেছিল, তাদের ও পাহারাদারদের উঠানে বসা সমস্ত ইহুদীদের সামনে সেই গুটানো কাগজটি মহসেয়ের নাতি, নেরিয়ের ছেলে বারূককে দিলাম।
আর আমি সেই দলিলটি আমার কাকাতো ভাই হনমেল ও যে সাক্ষীরা দলিলে স্বাক্ষর করেছিলেন, তাদের এবং যে সমস্ত ইহুদি রক্ষীদের প্রাঙ্গণে বসেছিল তাদের সাক্ষাতে মাসেয়ের পৌত্র নেরিয়ের পুত্র বারূককে দিলাম।
13 ১৩ তাদের সামনেই আমি বারূককে আদেশ দিলাম। আমি বললাম,
“তাদের উপস্থিতিতে আমি বারূককে এই সমস্ত আদেশ দিলাম:
14 ১৪ ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন তুমি সীলমোহর করা ও সীলমোহর না করা জমি কেনার গুটানো কাগজ দুটি একটি মাটির পাত্রে রাখ, যাতে তা অনেক দিন ঠিক থাকে’।
‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন, তুমি সিলমোহরাঙ্কিত ও সিলমোহর না করা, ক্রয় করা উভয় দলিলই নাও। সেগুলি তুমি একটি মাটির পাত্রে রাখো, যেন দীর্ঘদিন তা অবিকৃত থাকে।
15 ১৫ কারণ বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথা বলেন, ‘এই দেশে বাড়ি, জমি ও আঙ্গুর ক্ষেত আবার কেনাবেচা চলবে’।
কারণ বাহিনীগণের সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এই কথা বলেন, ঘরবাড়ি, ক্ষেত্র ও দ্রাক্ষাকুঞ্জ, এই দেশে আবার কেনাবেচা করা হবে।’
16 ১৬ জমি কেনার গুটানো কাগজটি নেরিয়ের ছেলে বারূককে দেবার পর আমি সদাপ্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করলাম,
“নেরিয়ের পুত্র বারূককে জমি ক্রয়ের দলিলটি দেওয়ার পর, আমি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করলাম:
17 ১৭ ধিক, প্রভু সদাপ্রভু! তুমি একাই তোমার মহাশক্তি ও ক্ষমতাপূর্ণ হাত দিয়ে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী তৈরী করেছ। তোমার পক্ষে কিছু করাই অসম্ভব না।
“অহো, সার্বভৌম সদাপ্রভু, তুমি তোমার মহাপরাক্রমে ও প্রসারিত বাহু দিয়ে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছ। তোমার পক্ষে কোনো কিছুই করা কঠিন নয়।
18 ১৮ তুমি হাজার পুরুষ পর্যন্ত তোমার চুক্তিতে বিশ্বস্ত থাক এবং বাবার পাপের শাস্তি তুমি তাদের পরের সন্তানদের কোলে দিয়ে থাক। তুমি মহান ও শক্তিশালী ঈশ্বর; বাহিনীগণের সদাপ্রভু তোমার নাম।
তুমি সহস্র-অযুত জনকে তোমার ভালোবাসা প্রদর্শন করে থাকো, কিন্তু বাবাদের পাপের প্রতিফল, তাদের পরে তাদের সন্তানদের কোলে দিয়ে থাকো। মহান ও পরাক্রমী ঈশ্বর, তোমার নাম বাহিনীগণের সদাপ্রভু,
19 ১৯ তোমার জ্ঞান মহান ও তোমার কাজগুলি শক্তিপূর্ণ। কারণ মানুষের সমস্ত পথে তোমার চোখ খোলা থাকে; তুমি প্রত্যেকজনকে তার আচরণ ও কাজের প্রতিফল দিয়ে থাক।
তোমার অভিপ্রায় সকল মহান এবং তোমার কাজগুলি শক্তিশালী। তোমার দৃষ্টি মানুষের সমস্ত জীবনাচরণের প্রতি থাকে; তুমি প্রত্যেকের আচরণ ও তার যেমন কর্ম, সেই অনুযায়ী তাকে প্রতিফল দিয়ে থাকো।
20 ২০ তুমি মিশর দেশে অনেক চিহ্ন ও আশ্চর্য্য কাজ করেছিলে। আজও পর্যন্ত ইস্রায়েল ও সমস্ত মানবজাতির মধ্যে সেই সব করে চলেছ, তাতে তোমার নাম বিখ্যাত হয়েছে এখনও হচ্ছে।
তুমি মিশরে যেসব চিহ্নকাজ ও বিস্ময়কর সব কাজ করেছিলে, তা ইস্রায়েল ও সমস্ত মানবসমাজে আজও করে যাচ্ছ। তার দ্বারা তুমি তোমার সুনাম আজও অক্ষুণ্ণ রেখেছ।
21 ২১ কারণ তুমি চিহ্ন ও আশ্চর্য্য কাজ দিয়ে এবং শক্তিশালী ও ক্ষমতাপূর্ণ হাত বাড়িয়ে, আতঙ্কের সঙ্গে তোমার প্রজা ইস্রায়েলকে মিশর থেকে বের করে এনেছিলে।
তুমি তোমার প্রজা ইস্রায়েলকে বিভিন্ন চিহ্ন ও বিস্ময়কর সব কাজ, এক পরাক্রমী বাহু ও প্রসারিত বাহুর দ্বারা মহা আতঙ্কের সঙ্গে মিশর থেকে বের করে এনেছিলে।
22 ২২ তুমি তাদের সেই দেশ দিয়েছিলে, যা তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে শপথ করেছিলে দুধ ও মধু প্রবাহিত একটি দেশ।
তুমি তাদের এই দেশ দান করেছিলে, যে দুধ ও মধু প্রবাহিত দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলে।
23 ২৩ এবং তারা প্রবেশ করেছিল ও তা অধিকার করেছিল, কিন্তু তারা তোমার কথা মান্য করে নি বা তোমার ব্যবস্থার বাধ্য হয়নি। তুমি যা করতে তাদের আদেশ দিয়েছিলে তার কিছুই তারা করে নি। তাই এই সমস্ত বিপদ তুমি তাদের উপর এনেছ।
তারা এখানে এসে এই দেশের অধিকার নিয়েছে, তবুও তারা তোমার কথা শোনেনি বা তোমার বিধান পালন করেনি। তুমি তাদের যা করার আদেশ দিয়েছিলে, তা তারা পালন করেনি। তাই তুমি সব ধরনের বিপর্যয় তাদের উপরে নিয়ে এসেছ।
24 ২৪ দেখ, শহরটি দখল করার জন্য স্তূপ তৈরী করা হয়েছে। তরোয়াল, দূর্ভিক্ষ এবং মহামারীর মধ্যে দিয়ে শহরটি কলদীয়দের হাতে সমর্পিত হবে, যারা এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তুমি যা বলেছ, তা ঘটেছে, দেখ, তুমি তা সবই দেখছ।
“দেখো, নগরের অধিকার নেওয়ার জন্য কী রকম ঢালু জঙ্গল তৈরি করা হয়েছে। তরোয়াল, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির কারণে, যারা এই নগর আক্রমণ করেছে, সেই ব্যাবিলনীয়দের হাতে এই নগর তুলে দেওয়া হবে। তুমি যা বলেছিলে, তুমি দেখতে পাচ্ছ, এখন তাই ঘটছে।
25 ২৫ তখন তুমি নিজে আমাকে বললে, ‘তুমি রূপা দিয়ে জমি কেনো ও সাক্ষী রাখ, কিন্তু এই শহরটি কলদীয়দের হাতে সমর্পিত হল’।”
আর যদিও এই নগর ব্যাবিলনীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তুমি, হে সার্বভৌম সদাপ্রভু, আমাকে বলেছ, ‘ওই ক্ষেত্রটি রুপোর টাকার বিনিময়ে কিনে নাও এবং আদানপ্রদানের সাক্ষী রেখো।’”
26 ২৬ সদাপ্রভুর এই বাক্য যিরমিয়ের কাছে এল এবং বলল,
তারপর সদাপ্রভুর বাক্য যিরমিয়ের কাছে উপস্থিত হল:
27 ২৭ “দেখ! আমি সদাপ্রভু, সমস্ত মানবজাতির ঈশ্বর। কোন কিছু করা কি আমার পক্ষে খুব কঠিন?”
“আমি সদাপ্রভু, সর্বমানবের ঈশ্বর। আমার পক্ষে কোনো কিছু করা কি খুব কঠিন?
28 ২৮ তাই সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “দেখ, আমি এই শহরটি কলদীয় ও বাবিলের রাজা নবূখদনিৎসরের হাতে সমর্পণ করব। সে এটি দখল করবে।
সেই কারণে, সদাপ্রভু এই কথা বলেন: আমি ব্যাবিলনীয়দের কাছে ও ব্যাবিলনের রাজা নেবুখাদনেজারের কাছে এই নগর সমর্পণ করতে চলেছি, তারা তা অধিকার করবে।
29 ২৯ যে কলদীয়েরা এই শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তারা শহরে আসবে ও আগুন লাগাবে; যে সব বাড়ি ছাদে লোকেরা বাল দেবতার উদ্দেশ্যে ধূপ জ্বালিয়ে এবং অন্যান্য দেবতার উদ্দেশ্যে পেয় নৈবেদ্য ঢেলে আমাকে অসন্তুষ্ট করে, সেই সব কিছুর সঙ্গে শহরটি পুড়িয়ে দেবে।
যে ব্যাবিলনীয়েরা এই নগর আক্রমণ করেছে, তারা ভিতরে প্রবেশ করে এই নগরে আগুন লাগিয়ে দেবে; তারা সেইসব গৃহের সঙ্গে তা অগ্নিদগ্ধ করবে, যেগুলির ছাদের উপরে লোকেরা বায়াল-দেবতার উদ্দেশে ধূপদাহ ও অন্যান্য দেবদেবীর উদ্দেশে পেয়-নৈবেদ্য উৎসর্গ করে আমার ক্রোধের সঞ্চার করেছে।
30 ৩০ কারণ ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা ছোটবেলা থেকে আমার চোখে সামনে মন্দ কাজ করেছে; বাস্তবিক ইস্রায়েলের লোকেরা তাদের হাতের কাজের মাধ্যমে আমাকে অসন্তুষ্টই করেছে।” এটা সদাপ্রভুর ঘোষণা।
“ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা তাদের যৌবনকাল থেকে অন্য কিছু নয়, কিন্তু আমার দৃষ্টিতে কেবলই মন্দ কাজ করেছে; প্রকৃতপক্ষে, ইস্রায়েলের লোকেরা অন্য কিছু করেনি, কিন্তু তাদের হাত দিয়ে তৈরি জিনিসগুলি দিয়ে আমার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছে, একথা সদাপ্রভু বলেন।
31 ৩১ “কারণ যখন থেকে এই শহরটি গড়ে উঠেছে, এটি আমার রোষ ও ক্রোধের কারণ হয়ে উঠেছে। এটা তখন থেকে আজ পর্যন্ত রয়েছে। এটা আমি আমার চোখের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলার যোগ্য হয়ে উঠেছে।
যেদিন থেকে এই নগরের গোড়াপত্তন হয়েছে, সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই নগর আমার রোষ ও ক্রোধ এত জাগিয়ে তুলেছে যে, আমি অবশ্যই এই নগরকে আমার দৃষ্টিপথ থেকে অপসারিত করব।
32 ৩২ কারণ ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা তাদের মন্দ কাজ দিয়ে আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে, তারা, তাদের রাজারা, নেতারা, যাজকরা, ভাববাদীরা এবং যিহূদার প্রত্যেকে ও যিরূশালেমের বাসিন্দারা।
ইস্রায়েল ও যিহূদার লোকেরা, তারা নিজেরা, তাদের রাজা ও রাজকর্মচারীরা, তাদের যাজক ও ভাববাদীরা, যিহূদার ও জেরুশালেমের লোকেরা যে সমস্ত অন্যায় করেছে, তার দ্বারা আমার ক্রোধ জাগিয়ে তুলেছে।
33 ৩৩ তারা আমার দিকে পিছন ফিরিয়েছে, মুখ নয়; যদিও আমি তাদের শিক্ষা দিতে আগ্রহী হয়েছি। আমি তাদের শিক্ষা দিতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু তারা কেউ আদেশ গ্রহণ করার জন্য শোনেনি।
তারা তাদের পিঠ আমার প্রতি ফিরিয়েছে, তাদের মুখ নয়। যদিও আমি বারবার তাদের উপদেশ দিয়েছি, তারা কিন্তু শোনেনি ও আমার শাসনে সাড়া দেয়নি।
34 ৩৪ যে গৃহ আমার নাম পরিচিত, সেটি তারা তাদের জঘন্য জিনিসগুলি স্থাপন করে অশুচি করেছে।
তারা তাদের ঘৃণ্য প্রতিমাগুলি আমার নামে আখ্যাত গৃহে স্থাপন করেছে এবং তা কলুষিত করেছে।
35 ৩৫ তারা মোলক দেবতার উদ্দেশ্যে তাদের ছেলে মেয়েদের উৎসর্গ করবার জন্য বিন্-হিন্নোম উপত্যকায় বাল দেবতার উদ্দেশ্যে উঁচু স্থান তৈরী করেছে, যা আমি কখনও তাদের আদেশ দিইনি; তা আমার অন্তরে আসেনি যে তারা এই রকম জঘন্য কাজ করে যিহূদাকে পাপ করাবে।
তারা বিন-হিন্নোমের উপত্যকায় বায়াল-দেবতার জন্য উঁচু সব স্থান নির্মাণ করেছে, যেন তাদের পুত্রকন্যাদের মোলক দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দেয়। সেকথা আমি তাদের আদেশ দিইনি বা তা আমার মনেও আসেনি, যেন তারা এরকম ঘৃণ্য কাজ করে যিহূদাকে পাপ করায়।
36 ৩৬ তাই এখন, তোমরা যে শহরের বিষয়ে বল, ‘এটি তরোয়াল, দূর্ভিক্ষ ও মহামারীর মধ্যে দিয়ে বাবিলের রাজাকে সমর্পিত হল’ সেই শহরের বিষয়ে আমি, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলি,
“তোমরা এই নগর সম্বন্ধে বলছ, ‘তরোয়াল, দুর্ভিক্ষ ও মহামারির দ্বারা এই নগর ব্যাবিলনের রাজার হাতে তুলে দেওয়া হবে’; কিন্তু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, সদাপ্রভু এই কথা বলেন,
37 ৩৭ দেখ, আমি নিশ্চয়ই তাদের জড়ো করব, যে সব দেশে আমি নিজের ক্রোধ, অসন্তোষ এবং প্রচণ্ড রোষে তাদের ছিন্নভিন্ন করেছি। আমি এই জায়গায় তাদের ফিরিয়ে আনব এবং তাদের নিরাপদে বাস করতে দেব।
আমার ভয়ংকর ক্রোধে ও প্রচণ্ড রোষে, আমি যে সমস্ত দেশে তাদের নির্বাসিত করেছিলাম, সেই সমস্ত দেশ থেকে তাদের নিশ্চয়ই সংগ্রহ করব; আমি তাদের পুনরায় এই দেশে ফিরিয়ে আনব এবং তারা নিরাপদে এখানে বসবাস করবে।
38 ৩৮ তখন তারা আমার প্রজা হবে ও আমি তাদের ঈশ্বর হব।
তারা আমার প্রজা হবে ও আমি তাদের ঈশ্বর হব।
39 ৩৯ আমি তাদের একটি অন্তর ও একটি পথ দেব, যা দিয়ে তারা প্রতিদিন আমার সম্মান করবে; এটি তাদের ও তাদের পরের সন্তানদের জন্য মঙ্গল জনক হবে।
আমি তাদের মঙ্গলের জন্য ও তাদের পরে তাদের সন্তানদের মঙ্গলের জন্য তাদের একনিষ্ঠ হৃদয় ও এক উদ্দেশ্য দেব, যেন তারা সবসময়ই আমাকে ভয় করে।
40 ৪০ আমি তাদের জন্য এই চিরস্থায়ী ব্যবস্থা স্থাপন করব যে, আমি তাদের দিক থেকে কখনও মুখ ফেরাব না। আমি তাদের মঙ্গল করব এবং তারা যেন আমাকে ত্যাগ না করে, তাই তাদের অন্তরে সম্মান স্থাপন করব।
আমি তাদের সঙ্গে এক চিরস্থায়ী নিয়ম করব; তাদের মঙ্গল করায় আমি কখনও নিবৃত্ত হব না, আমাকে ভয় করার জন্য আমি তাদের প্রেরণা দেব, যেন তারা কখনও আমার কাছ থেকে ফিরে না যায়।
41 ৪১ আমি আনন্দের সঙ্গে তাদের মঙ্গল করব। আমি সম্পূর্ণ অন্তর ও ইচ্ছা দিয়ে বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাদের এই দেশে রোপণ করব।”
তাদের মঙ্গলসাধন করে আমি আনন্দিত হব এবং আমার সম্পূর্ণ মনেপ্রাণে নিশ্চিতরূপে তাদের এই দেশে রোপণ করব।
42 ৪২ কারণ সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “আমি এই লোকদের উপর যেমন এই সমস্ত মহা বিপদ এনেছি, তেমনি তাদের কাছে যে সমস্ত মঙ্গল করার প্রতিজ্ঞা করেছি, তাদের জন্য সে সমস্ত করব।
“সদাপ্রভু এই কথা বলেন, আমি যে রকম সব মহা বিপর্যয় এসব লোকের উপরে এনেছি, সেইরকমই আমার প্রতিশ্রুত সব সমৃদ্ধি তাদের দেব।
43 ৪৩ তার এই যে দেশের বিষয়ে তোমরা বলছ, ‘এটি একটি পতিত জমি, যেখানে মানুষ বা পশু কিছুই নেই; কারণ এটি কলদীয়দের হাতে সমর্পিত হয়েছে’।
আর একবার এই দেশে জমি কেনাবেচা হবে, যে দেশ সম্বন্ধে তোমরা বলো, ‘এই দেশ নির্জন পরিত্যক্ত স্থান, যেখানে কোনো মানুষ বা পশু থাকে না, কারণ এই দেশ ব্যাবিলনীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’
44 ৪৪ সেই দেশে আবার জমি কেনাবেচা হবে। বিন্যামীন প্রদেশে, যিরূশালেমের চারপাশের এলাকায়, যিহূদার ও পার্বত্য অঞ্চলের সমস্ত শহরে, নেগেভের সমস্ত শহরে লোকেরা রূপা দিয়ে জমি কিনবে, সীলমোহর গুটানো কাগজে লিখবে এবং সাক্ষী রাখবে; কারণ আমি তাদের অবস্থা ফেরাব।” এটা সদাপ্রভুর ঘোষণা।
জমি রুপো দিয়ে ক্রয় করা হবে, দলিল সব স্বাক্ষরিত হবে, সিলমোহরাঙ্কিত করা হবে ও সাক্ষী রাখা হবে, বিন্যামীন গোষ্ঠীর এলাকায়, জেরুশালেমের চারপাশের গ্রামগুলিতে, যিহূদার সমস্ত নগরে এবং পার্বত্য অঞ্চলের নগরগুলিতে, পশ্চিমের পাহাড়তলিতে এবং নেগেভের দেশগুলিতে, কারণ আমি তাদের বন্দিদশা থেকে ফিরিয়ে আনব, একথা সদাপ্রভু বলেন।”

< যিরমিয়ের বই 32 >